1. admin@dailydigantor.com : admin :
খাদ্যপণ্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় টয়লেট্রিজের দামও হু হু করে বাড়ছে - দৈনিক দিগন্তর
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

খাদ্যপণ্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় টয়লেট্রিজের দামও হু হু করে বাড়ছে

দৈনিক দিগন্তর ডেস্ক
  • আপডেট সময় : শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দিগন্তর ডেস্ক।।বাংলাদেশে সম্প্রতি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম যেমন বাড়ছে তেমনি এর পাশাপাশি নানা ধরনের টয়লেট্রিজ সামগ্রীর দামও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই মাসে সাবান, ডিটারজেন্টের মতো নিত্য ব্যবহারের টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এমন অবস্থায় সব দিকের বাড়তি খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ভোক্তারা।

বাংলাদেশে টয়লেট্রিজ পণ্য উৎপাদনকারীরা বলছেন, দাম বাড়ার পেছনে মূলত কাঁচামালের দাম ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ভূমিকা রয়েছে। তবে ভোক্তা অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তারা এই যুক্তি পুরোপুরি মানতে নারাজ। তাদের মতে, যে পরিমাণে দাম বাড়ছে তার পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা কাজ করছে।

সংসার খরচ বেড়েছে
রাজধানী ঢাকার বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা তানজিলা হোসেন বলেন, বিভিন্ন ধরণের সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, কাপড় ধোয়ার গুড়ো সাবান, চুলে দেয়ার তেল, হ্যান্ডওয়াশ, ঘর পরিষ্কার ও বিভিন্ন পরিষ্কারক দ্রব্যের দাম গত দুই-তিন মাসের ব্যবধানে এখন অনেক বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।

দাম বাড়ার কারণে এসব টয়লেট্রিজ পণ্যের পেছনে তার সংসার খরচ অন্তত দুই হাজার টাকা বেড়েছে।

তিনি বলেন, আগে তিন হাজার টাকার মধ্যেই হয়ে যেতো জিনিসপত্রগুলো। প্রত্যেকটা জিনিসেই এখন পাঁচ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়ছে।

‘আবার শ্যাম্পুর দাম অনেক বাড়ছে। আগে যে শ্যাম্পু কিনতাম ২৭০ টাকা করে এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ৩৫০ করে’ তিনি বলেন।

দেশী বনাম বিদেশী পণ্য
আবার অনেক ভোক্তা বাড়তি দামের সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে না পেরে কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবহারের পরিমাণ। আমদানি করা দামী পণ্যের পরিবর্তে দেশীয় কম দামী পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন অনেকে।

এমন একজন রাজধানীর ওয়ারি এলাকার বাসিন্দা তানজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিটা একটা আতঙ্কের মতোই মনে হয় তার কাছে।

‘টিস্যুর দাম বেড়েছে, সাবানের দাম বেড়েছে, টয়লেটে ব্যবহার করার মতো যে জিনিসপত্র সেগুলোর দাম বেড়েছে।’

তার মতে, যে পণ্যের দাম বেড়ে যায় মানুষ তখন সেই পণ্য ব্যবহার না করে এর বিকল্প কমদামী পণ্যের দিকে ঝোঁকে।

তিনি বলেন, ‘আগে অনেক বড় বড় সাইজের সাবান কেনা হতো বেশি দাম দিয়ে। যখন দামটা বেড়ে গেল, তখন ছোট সাইজের সাবান কেনা হয়।’

সাবান ও ডিটারজেন্টে
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সাবান এবং ডিটারজেন্টের দাম। এসব পণ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বেড়েছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এছাড়া চুলের তেল, হ্যান্ডওয়াশ, ঘর মোছার তরল, বাথরুম পরিষ্কার করার বিভিন্ন পণ্য, টিস্যু-এক কথায় প্রায় সব পণ্যের দামই বাড়তি।

খুচরা ব্যবসায়ী নূরে আলম নয়ন বলেন, এক কেজি ওজনের ডিটারজেন্টের প্রত্যেকটা ব্র্যান্ডে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা করে বেড়েছে। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সাবান যেটা ৩৫ টাকা ছিল সেটা এখন ৫৫ টাকা, যেটা ৫৫ টাকা ছিল সেটা এখন ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেন বাড়ছে দাম?
কনস্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের শেষের দিকে দেড় শ’ গ্রাম ওজনের যে গোসলের সাবানের দাম ৫৫ টাকা ছিল, শুক্রবার সেটি বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়। এক্ষেত্রে দাম বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সুগন্ধি সাবানের দাম বেড়েছিল ৯ শতাংশের বেশি। আর ২০২২ সালে এই হার আরো অনেক বেশি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

বাংলাদেশে টয়লেট্রিজ পণ্য উৎপাদনকারীদের মধ্যে অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান ইউনিলিভার বাংলাদেশ। এই প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স শামীমা আক্তার বলেন, দাম বাড়ার পেছনে মূলত কাঁচামালের দাম ও আমদানি খরচ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, তারা যে পণ্যগুলো উৎপন্ন করেন তার ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আসে দেশের বাইরে থেকে। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে একটা বড় ইম্প্যাক্ট হয়েছে। আর বিশ্বজুড়ে এখন যে ইনফ্লেশন বা মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাচ্ছে সেটিও দাম বাড়ায় ভূমিকা রাখছে।

মিজ আক্তার বলেন, তাদের কাঁচা মালের দাম অনেক বেশি বেড়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঁচা মালের দাম ২০০ শতাংশ বেড়েছে।

‘এটা নিয়ে আমরা কনস্ট্যান্টলি কাজ করছি এবং চেষ্টা করছি যে, সহনীয় পর্যায়ে একটা দাম বৃদ্ধি করতে। কিন্তু দাম বৃদ্ধি না করে আসলে আমাদের পক্ষে এই পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না’ বলেন তিনি। আর এ কারণেই বাংলাদেশের বাজারেও টয়লেট্রিজ পণ্যের উর্ধ্বগতি দু’মাস বা তিন মাস ধরে দেখা যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

অতি মুনাফার প্রবণতা
তবে কনস্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাব দেশের বাজারে কিছুটা অনুভূত হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে যে পরিমাণে দাম বাড়ছে তার পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার প্রবণতা কাজ করছে বলে তিনি মনে করেন ।

গোলাম রহমান বলেন, ‘একটা অতি মুনাফার যে প্রবণতা সর্বত্র আমরা লক্ষ্য করছি, উৎপাদক পর্যায়ে, খুচরা পর্যায়ে, সবারই একটা প্রবণতা হলো বেশি মুনাফা করা। তারই প্রভাবে সব জিনিসের দাম বাড়ছে।’

‘টয়লেট্রিজের দামও বাড়ছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের এসব পণ্যের ব্যবহার কমছে। যার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে আর এতে কোনো সন্দেহ নাই’ বলেন গোলাম রহমান।

উৎপাদনকারীরা বলছেন, যত দিন না বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের দাম কমছে এবং সাপ্লাই চেইন এর মতো বিষয়গুলো ঠিক না হচ্ছে, ততদিন দেশীয় বাজারে এ জাতীয় পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা তারা দেখছেন না।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর