নিজস্ব প্রতিবেদক।।তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন উপায়ে তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে দেশীয় ও বহুজাতিক বিভিন্ন তামাক কোম্পানি। কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। এছাড়া তামাক কোম্পানি ও তাদের সুবিধাভোগীরা তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক নীতি প্রণয়নে বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তামাকপণ্যের প্রচারণা বন্ধে আইনের বাস্তবায়ন জরুরি।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট বাংলাদেশের কনফারেন্স রুমে ‘তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন বন্ধে আইন বাস্তবায়নের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক মতবিনিময়সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন বক্তারা।
যৌথভাবে এ সভা আয়োজন করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অধীনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)। এতে সভাপতিত্ব করেন এনটিসিসি সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খন্দকার।
বক্তারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় অনুসারে সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্য অর্জনে এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগ অব্যাহত থাকলেও কোম্পানিগুলো প্রচার-প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে শিশু-কিশোর ও তরুণরা ধূমপানে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং তামাকজনিত ক্ষয়-ক্ষতি ও মৃত্যুহার বাড়ছে। আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। এতে প্যানেল আলোচনা করেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান ও দি ইউনিয়ন (যুগ্মসচিব-অনলিয়েন) কনসালটেন্ট মো. ফাহিমুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার ডা. মো. ফরহাদুর রেজা।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনানুযায়ী সবধরনের তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হওয়া সত্তেও একাধিক গবেষণায় প্রকাশ্যে এ পণ্যের বিভিন্ন চটকদার বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের বিষয়টি উঠে এসেছে।
সরকার তামাকনিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সিগারেটের একক শলাকা বিক্রি হওয়ার ফলে পণ্যের মোড়কে উল্লেখিত স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ক্রেতারা দেখতে পায় না। এছাড়া সিগারেটের ব্যবহার কমাতে ও তরুণ প্রজন্মকে ধুমপান থেকে দূরে রাখতে খুচরা শলাকা বিক্রয় বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু কোম্পানিগুলো আইন সংশোধন প্রক্রিয়ার নিজেদের অংশীজন দাবি করছে। কিন্তু স্বাস্থ্যহানিকর পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সরকারের অংশীজন হতে পারে না।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে কোম্পানির হস্তক্ষেপ রোধ করা জরুরি। এজন্য কোম্পানিকে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের আরও বেশি সচেষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সমাজের সবস্তরের মানুষের অংশ নেওয়া প্রয়োজন।
সভাপতির বক্তব্যে হোসেন আলী খন্দকার বলেন, তামাকের ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি বিষয়ে সাধারণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর করার পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা প্রয়োজন। তামাকের বিরুদ্ধে সবাইকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে।
এছাড়া মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন— ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কেরানীগঞ্জ সার্কেল) শাহাবুদ্দিন কবির, ঢাকার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ইয়সামিন নাহার, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিসের সিনিয়র সহকারী কমিশনার পাপিয়া আক্তার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (এনসিডিসি) ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মুস্তাাফিজুর রহমান প্রমুখ।