গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে না পেরে ক্ষোভে পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া সেই নূরুজ্জামানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চুড়ালি গ্রামে।
এ ঘটনায় নূরুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের মাঝে শোকাবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, নুরুজ্জামান চুড়ালি গ্রামের আব্দুল মালেক ও হেলেনা দম্পত্তির ছেলে। তারা চার ভাই ও তিন বোন। গত ২০ বছর যাবত সে নারায়নগঞ্জের কাচপুরে একটি গার্মেন্টসে চাকরী করত। সেখানেই চাকরির সুবাধে সফুরা আক্তার নামে এক নারীকে বিয়ে করে সংসার করে আসছিল। তাদের দাম্পত্য জীবনে দু’টি সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করেছেন নূরুজ্জামানের চাচা আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ভিডিওটা দেখলেই বোঝা যায় যে নূরুজ্জামানকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কারণ একটা মানুষ লাফ দিলে যে ভাবে পড়ে, নূরুজ্জামান সেভাবে পড়েনি। দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে যেন একটি মূর্তি ফেলে দেয়া হয়েছে। আমরা তার মরদেহ চাই এবং হত্যাকারীদের বিচার চাই।
নূরুজ্জামানের বোন ময়না বলেন, আমার ভাই আত্মহত্যা করতে পারে না। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। অন্য মানুষকে বলত, আত্মহত্যা মহাপাপ। সেই মানুষ আবার কিভাবে আত্মহত্যা করে। আমার ভাইকে খুন করে ফেলে দেয়া হয়েছে।
মা হেলেনা বেগম বলেন, নুরুজ্জামানের বউ, তার বোন, তার জামাই ও ছেলেকে নিয়ে আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। জমি নিয়া তাদের সাথে গন্ডগোল ছিল। তাই আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নূরুজ্জামানের ভাই আবুল কাশেম বলেন, গত ১৫ আগস্ট আমার ভাই পদ্মা সেতু থেকে লাফ দিয়েছে এমন খবর পেয়ে ওই দিন মধ্যরাতে তাদের বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে ভাইয়ের স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাই। তখন দরজায় প্রায় আধাঘন্টা ধাক্কাধাক্কি করার পর ভাইয়ের স্ত্রী সফুরা দরজা খোলে। পরে আমি ভাইয়ের স্ত্রী সফুরা, দুই ভাতিজি সফুরার বোন ও তার জামাই ফজলুল হক এবং তার ছেলে মোজ্জাম্মেল হককে নিয়ে পদ্মা সেতু এলাকার থানায় যাই।
সেখানে গিয়ে ওই গাড়ির চালক ও নূরুজ্জামানের সাথে থাকা ফারুক মিয়াসহ দুইজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানতে পারি। পরে এই বিষয়ে আমরা থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পুলিশ বাদী হয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করেন।
এদিকে মোজাম্মেলের সাথে থাকা ফারুকের আত্মীয়রা তাকে ছাড়িয়ে আনতে যায়। তবে পুলিশ তাকে ছাড়েনি। এসব করতে করতেই রাত হয়ে যায়। পরে ফেরার সময় আমার ভাবি, দুই ভাতিজিকে খোঁজে পাই না। তারা ফারুকের আত্মীয়দের সাথে আমাকে ফেলে রেখেই চলে আসে। এমতাবস্থায় আমি ভাবিকে ফোন দিয়ে বলি আমি সবার নামে মামলা করব। পরে ভাবি ওই গাড়ি থেকে নেমে দুই ভাতিজিকে নিয়ে আমার সাথে আসে।
তিনি আরও বলেন, জমি নিয়ে তার স্ত্রীর (সফুরা) বোন, তার জামাই ফজলুল হক এবং তার ছেলে মোজাম্মেলের ঝামেলা চলে আসছিল। ৬ লাখ টাকায় দুই কাঠা জমি আমার ভাই নূরুজ্জামানকে লিখে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু লিখে দেয়নি। এসব নিয়েই তাদের সাথে বিরোধ চলে আসছিল।
এই বিরোধের কারণেই তারা আমার ভাইকে মেরে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিয়েছে। আমরা চাই ঘটনাটি সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
তবে নূরুজ্জামানের স্ত্রী সফুরা বলেন, নূরুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর করব জিয়ারত করতে যাবেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। সকালে উঠে আমাকে ঘুমে রেখেই চলে যায়। পরে তার সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি। সে আত্মহত্যা করছে নাকি মারা গেছে, ভিডিওতে আপনারা যা দেখেছেন, আমিও তাই দেখেছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ আগস্ট ভোরে নূরুজ্জামান ওমর ফারুক নামের একজনকে সাথে নিয়ে টুঙ্গিপাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান’র কবর জিয়ারত করতে যান। কিন্তু কবর জিয়ারত ও ফুল দেওয়া জন্য অনুমতি কার্ড না থাকায় সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর পদ্মা সেতু দিয়ে ফেরার পথে চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে ঝাঁপ দেন তিনি, এরপর থেকে তিনি নিঁখোজ।
এ বিষয়ে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনায় কোন ধরনের অভিযোগ আমার জানা নেই। তাছাড়া পদ্মা সেতু থেকে লাফ দেওয়া ব্যক্তির বাড়ি গৌরীপুর কি না, তাও আমার জানা নেই।