স্টাফ রিপোর্টার।। বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের কথ্য ভাষা হলো বাঙ্গাল ভাষা। ভাষাতত্ত্ববিদ সুনীতি চট্টপাধ্যায় এর নাম দিয়েছেন “বঙ্গালী উপভাষা”। আমার মতে “উপভাষা” (Dialect) নয় “লোকভাষা” (Folk Language) শব্দটি বেশি যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু উদ্বাস্তুরা নিজেদের বলেন “বাঙ্গাল” বা “বাঙাল” সম্প্রদায় বা জাতি আর তাদের কথ্য ভাষা কে বলেন “বাঙ্গাল (লোক) ভাষা”। ভাষাবিদরা অবশ্য নানা মত পোষণ করেন।
যা হোক সমস্যা হলো এই লোকভাষা আজ অবলুপ্তির পথে। এর নানা কারণ রয়েছে। একটি হলো বাঙ্গালদের হীনমন্যতা বোধ। উদ্বাস্তু বাঙ্গালরা আজ কর্মে ও অর্থে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাদের ধারণা যে এই ভাষাতে কথা বললে তাদের নিচু ও অনুন্নত (Backward) সংস্কৃতি ও জাতিসত্বা (Identity) প্রকাশ ঘটে। কলকাতার ভদ্রলোক বাঙালি ও মান্য বাংলা (Standard Bengali) ভাষার সঙ্গে তুলনা হবে ও বাঙ্গালদের লোক জাতিসত্বা (Folk Identity) প্রকাশ পাবে। তাই প্রানপনে তারা প্রমান করে যে “এহন আমরা আর আমাগো ভাষা কইতে পারি না, ভুইল্যা গেছিগা”।
এটা একটা মস্ত বড় ভুল মানসিকতা। তার প্রমান বিহার ও ইউপির “ভোজপুরি” লোকভাষা। অত্যন্ত সুমিষ্ট ভোজপুরি লোকভাষা। ভোজপুরি ভাষায় লোকগান এমনকি হিন্দি গানের থেকেও বেশি সমাদৃত ও জনপ্রিয় সারা দেশে। লোকগান হলেও আধুনিক গানের থেকে তফাৎ করা যায় না ভোজপুরি গানকে। এমনকি এই ভাষায় আধুনিক সাহিত্যও রচিত হচ্ছে। ভোজপুরি সিনেমা ও চলচিত্র হিন্দি সিনেমার মতো সমান জনপ্রিয় সারা দেশে। “নাদিয়া কে পার” নামে ভোজপুরি সিনেমা সারা দেশে খুব সারা ফেলেছিল। বাঙ্গাল লোকভাষাও যে সমান সুমিষ্ট তার প্রমান আছে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌতুক (Search Google) বা গোষ্ঠ গোপাল দাসের ভাটিয়ালি গান এর প্রমান। আওয়ামী লীগ প্রভাবিত বাংলাদেশি তাত্বিক, ভাষাবিদ, ঐতিহাসিক ও রাজনীতিকরাও পাকিস্তানি প্রভাব ধ্বংস করার জন্যে অখণ্ড বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে তুলে ধরেন। এর উদ্দেশ্য মহান, কিন্তু এতে বাস্তবকে ও সত্যকে অস্বীকার করা হয়।