বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে ফের এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন তিনি জাতীয় জরুরী পরিষেবা ৯৯৯এ কল দিয়ে সংযুক্ত হতে ব্যর্থ হয়েছেন। উল্লেখ্য, এর পূর্বে এপ্রিল মাসে বহিরাগতদের দ্বারা শিক্ষার্থী ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছিল।
মঙ্গলবার (২৮শে জুন) সকাল সোয়া সাতটার দিকে নগরীর বটতলী স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে ঘটনার বিষয়ে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে নিষেধ করেছেন বলে ভুক্তভোগীর বরাতে ফেইসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগীর সহপাঠীরা।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর বরাতে করা ফেইসবুক পোস্টটি নিম্নরূপ, আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী। আজকে ২৮শে জুন সকাল ৭:১০ ঘটিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে ২য় বগিতে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। আজ সকাল ৭:৩০ টার ট্রেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনের উদ্দেশ্যে সকাল ৭:০০ টার দিকে ২য় বগিতে উঠি। বগিতে সামনের দরজার কাছাকাছি ২ জন বহিরাগত ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আরেকজন বগিতে হাঁটাহাঁটি করছিল।
তার উদ্দেশ্য অসৎ অনুমান করে আমি ৭ঃ০৫ মিনিট আমার সহপাঠীকে ফোন করি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করে দ্রুত আমি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। কিন্তু ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি। ঠিক সেই মুহূর্তই যে বহিরাগত হাঁটাহাঁটি করছিল সে আমার মুখ চেপে ধরে এবং আমার বুকে হাত দেয় এবং সামনে থেকে দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে, আত্মরক্ষার্থে আমি তাকে লাথি মারি এবং চিৎকার করি। ঠিক ওই মুহূর্তে লোকটি তার হাত আমার মুখ থেকে সরিয়ে নেয় এবং তখন আমি চিৎকার করি, তখনই বগি থেকে লোকটি দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন সামনে যে দুই জন ঘুমন্ত ছিল আমার চিৎকার শুনে লোকটিকে ধরতে যায়। আমি ট্রেন থেকে নেমে চিৎকার করতে থাকি। তখন স্টেশনে অবস্থানরত একজন আমাকে জানায় যে লোকটিকে ধরা হয়েছে। লোকটিকে ৮নং এ প্ল্যাটফর্মে ধরা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ টার ট্রেনের প্ল্যাটফর্মের সামনে লোকটিকে আনা হয়। লোকটিকে রেলওয়ে পুলিশের লোকজন মারধর করে। আমি ভিডিও ধারণ করার সময় পুলিশ আমাকে বাঁধা দেয়। তারপর লোকটিকে রেলওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় কর্মরত কোনো অফিসার ছিল না। তাঁদের ফোন করে আনা হয়। পুলিশ আমার লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করবে বলে নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর জিজ্ঞেস করে।
এরপর পুলিশ আমাকে ঘটনাটির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানাতে নিষেধ করে এবং পুলিশের ভাষ্যমতে, “এতে আপনার মানহানি হতে পারে। এই ব্যাপারে আপনার সিক্রেসি মেন্টেইন করা উচিত। এটা আপনার মান-সম্মানের ব্যাপার।”
তারপর তারা আমাকে এজহার করে যেতে বলে কিন্তু পরবর্তীতে আমার থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ বা স্বাক্ষর নেয়নি। আমি একই দিনে অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি অবগত করি। প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর উনারা আমাদেরকে গিয়ে মামলা করে আসতে বলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার ট্রেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন বলে এক ছাত্রী অভিযোগ করেছে। আমরা ওই ছাত্রীকে রেলওয়ে থানায় মামলা অথবা অভিযোগ দিতে বলেছি। আমাদের রেলওয়ে থানার সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশ সমাধান করার চেষ্টা করছে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বর্তমানে থানায় রয়েছেন এবং মামলার প্রক্রিয়া চলছে।