সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে জেলার নদ-নদীগুলোর পানি বেড়ে চলছে।
ঢলের পানিতে এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সুরমা নদীর পার উপচে শহরে পানি ঢুকে পড়ায় বিভিন্ন এলাকায় বাসবাড়ি তলিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় বন্যাকবলিত পরিববারগুলো দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভোগের আশঙ্কা করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) দুপুর তিনটা পর্যন্ত জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা কুশিয়ারা ও সারি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার এবং সারি নদের সারিঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানিও ক্রমশ বাড়ছে।
এদিকে সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ স্থানে আগামী কয়েকদিন ভারীবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি মাসজুড়ে সিলেটে কমবেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনার আছে।
সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে সর্বোচ্চ ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হবে। তবে ১৯ ও ২০ জুন বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী ২-৩ দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা কম থাকলেও আগামী ২৫ জুন বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়াও পুরো মাসজুড়ে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ের ভেতরে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।
এসব রাস্তা দিয়ে যানবাহনের বদলে মানুষজন নৌকায় চলাচল করছেন। এর বাইরে সিলেট নগরের অন্তত ৮ থেকে ১০টি এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগর ও পাঁচটি উপজেলায় অন্তত চার থেকে সাড়ে চার লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট নগরের তালতলা, জামতলা, সোবহানীঘাট, তেরোরতন, উপশহর, কালীঘাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সুরমার পার উপচে পানি ঢুকে পড়ায় আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অনেক বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি উঠেছে। কোথাও কোথাও হাঁটুপানি দেখা গেছে। ঘরের ভেতরে পানি ওঠায় অনেকে আত্মীয়ে বাড়ি সরে যাচ্ছেন।
নগরের উপশহর এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবি হুমায়রা রশিদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, আগের বার বন্যার পানি ওঠায় তাঁর ঘরের আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারও বাসায় পানি ওঠার উপক্রম। পানি ক্রমশ বাড়ছে।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আনোয়ার সাদাত আমার সংবাদকে জানান, প্রয়োজনীয় স্থানে আশ্রয়কেন্দ্র চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির খবরাখবর রাখছেন।