1. admin@dailydigantor.com : admin :
টিপু হত্যা: যেভাবে ওমানে আটক হন মুসা - দৈনিক দিগন্তর
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৪:০০ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৪:০০ অপরাহ্ন

টিপু হত্যা: যেভাবে ওমানে আটক হন মুসা

দৈনিক দিগন্তর ডেস্ক
  • আপডেট সময় : শনিবার, ১১ জুন, ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার | রাজধানীর মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু এবং কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যা মামলায় ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান থেকে সুমন শিকদার মুসাকে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, কিলিং মিশনের ১২ দিন আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দুবাই যান মুসা। তদন্তে মুসার নাম আসার পরই বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশ থেকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সহযোগিতা চাওয়া হয় ইন্টারপোলের কাছে। এরই মধ্যে গত ৮ মে দুবাই থেকে ওমানে যান মুসা। ওমানের সালালায় অবস্থিত হযরত আইয়্যুব (আ.) এর কবর জিয়ারত করে ১২ মে ফের দুবাই ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি।

ডিবি জানায়, মুসা ওমানে আটক হওয়ার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সমঝোতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এতে টিপু হত্যা মামলার তদন্তে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওমানের মাস্কাট বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় সন্দেহ হয় ওমান পুলিশের। ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটের ছবির সঙ্গে মিলিয়েও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না দেশটির পুলিশ সদস্যরা।

তাৎক্ষণিকভাবে ওমান পুলিশের এনসিবি শাখা যোগাযোগ করে বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখার সঙ্গে। ওই ব্যক্তিই মুসা জানিয়ে আটক রাখার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ পুলিশ। এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে মুসাকে আটক রাখে ওমান পুলিশ। জানা গেছে, হযরত আইয়্যুব (আ.) এর কবর জিয়ারত করতেই ওমান গিয়েছিলেন মুসা।

টিপু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও অভিযানের নেতৃত্বদানকারী গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহিদুর রহমান রিপন ওমান থেকে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনার নেতৃত্ব দেন। তার সঙ্গে আরও ছিলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদরদপ্তরের এনসিবি বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন।

এডিসি শাহিদুর রহমান রিপন বলেন, ইন্টারপোলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পুলিশ দুবাই পুলিশের মাধ্যমে মুসাকে আটকের চেষ্টা শুরু করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুবাই থেকে ওমানে চলে যান তিনি। পরে ওমান পুলিশের মাধ্যমে মুসাকে শনাক্ত করে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়।

তিনি বলেন, আলোচিত এই হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে শুটার মাসুমের জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনায় মুসার নাম আসে।

টিপু হত্যা মিশনের সব ঠিকঠাক করে গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করেছিলেন মুসা। আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি শুটার মুসা নামে পরিচিত। জোড়া খুনের তদন্তে তার নাম আসার পরই নড়েচড়ে বসেছিলেন গোয়েন্দারা।

কিলিং অপারেশনের ১২ দিন আগে শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে পালান মুসা। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিদেশ থেকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুসা প্রথমে দুবাই গেলেও পরে সেখান থেকে ওমান পালিয়ে যান। এরপর ওমানের সঙ্গে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে বাংলাদেশ।

মুসার বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুরের পল্লবী থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ ১১টি মামলা রয়েছে। তিনি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য। মতিঝিল এজিবি কলোনিতে যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সুমন শিকদার ওরফে মুসা। রিজভী হাসান হত্যা মামলার বাদী তার বাবা আবুল কালাম। এই আবুল কালাম আবার জাহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রিজভী হত্যা মামলা মিটমাটের জন্য সুমন শিকদারসহ আসামিরা জাহিদুলের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, দলীয় প্রতিপক্ষ জাহিদুলকে হত্যা করতে রিজভী হাসান হত্যা মামলার আসামিদের ব্যবহার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, তিন-চার মাস আগে টিপু হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম সদস্য মুসার সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে মুসাকে ৯ লাখ টাকা দেন তিনি। মার্চের ১২ তারিখে টাকা নিয়ে দুবাই চলে যান সুমন শিকদার ওরফে মুসা।

এদিকে আজ শুক্রবার (১০ জুন) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ডাবল মার্ডারের ঘটনায় বগুড়া থেকে গ্রেফতার শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশের স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দিতে মূল পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কারী হিসেবে মুসার নাম আসে। পরে জানা যায়, মুসা ঘটনার আগেই ১২ মার্চ দেশ ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত চলে যান। তার সন্ধান পেতে ৬ এপ্রিল পুলিশ সদরদপ্তরের এনসিবি শাখায় যোগাযোগ করা হয়। পুলিশ সদরদপ্তর ৮ এপ্রিল মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইন্টারপোলের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে। এর মধ্যে ৮ মে জানা যায় মুসা দুবাই থেকে ওমানে প্রবেশ করেছেন। ওমান পুলিশ গত ১২ মে মুসাকে গ্রেফতার করে। বাংলাদেশ পুলিশের একটি টিম ওমানে গিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনে।

ডিবি প্রধান বলেন, মুসাকে না পেয়ে মামলার তদন্তে হিমশিম খাচ্ছিলাম। তবে এনসিবির মাধ্যমে ইন্টারপোলের সহায়তায় মুসাকে ওমান থেকে গ্রেফতার করে দেশে আনা হয়েছে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর