1. admin@dailydigantor.com : admin :
চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড সর্বকালের মর্মান্তিক ট্রাজেডি - দৈনিক দিগন্তর
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৩:৩৮ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড সর্বকালের মর্মান্তিক ট্রাজেডি

দৈনিক দিগন্তর ডেস্ক
  • আপডেট সময় : সোমবার, ৬ জুন, ২০২২

 

  • বাবা আমাকে মাফ করে দিও আমি মারা যাচ্ছি
  • ১ম সন্তানের মুখ না দেখেই মারা গেলেন ফায়ার ফাইটার মনির
  • প্রথম লাইভকারীর মৃত্যু
  • টানা ১৬ ঘন্টা চেষ্টার পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি
  • পুড়েছে পণ্যভর্তি ১৩শ কনটেইনার, ৯শ কোটি  টাকার ক্ষতি
  • তদন্ত কমিটি গঠন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সর্বকালের মর্মান্তিক ট্রাজেডি দেখল বিশ্ববাসী। বিশ্বগণমাধ্যমে শিরোনাম চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড। এমন একটি সময় চট্টগ্রামবাসী দেখার জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলেন না। এতটা হৃদয়বিদারক তা কখনো প্রকাশ করার মতো না। চারদিকে আহাজারি আর আর্তনাদ ছাড়া কিছুই নেই। স্বজন থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাসেবী ও সাধারণ মানুষ সীতাকুন্ড থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ প্রয়োজনীয় স্থানে ছোটাছুটি করছেন প্রিয়জনের লাশ ওষুধ বা রক্তের জন্য। একইভাবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদ সাধারণ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করার জন্য। যেন প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন, রক্ত দেওয়া থেকে শুরু করে সর্বত্রই। বিশেষ করে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বিষাক্ত ধোঁয়া আর কেমিক্যালের পোড়া গন্ধে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে অসুবিধাই শিশু ও বৃদ্ধরা।

গত শনিবার রাত দশটার পর সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ির কাশেম জুট মিলস সংলগ্ন বিএম কন্টেনার ডিপোতে রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে। বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে এই পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৪৩ জন। আহত অসংখ্য। টানা ১৬ ঘন্টা চেষ্টার পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। তবে বিস্ফোরণের সূত্রপাত নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি এখনো।

সন্তান যদি বাবাকে ফোন করে বলেন, বাবা আমার একটা পা উড়ে গেছে। ফের ফোন করে বলে ,বাবা আমি মারা যাচ্ছি। আমাকে মাফ করে দিও। আমাকে কালেমা পরিয়ে দাও। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা কি হতে পারে । তিন মাস আগে বিএম কনটেইনার ডিপোতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজে ঢুকেছিলেন মোমিনুল। সে হাজী মোহাম্মদ মহসীন কলেজে মাস্টার্সের ছাত্র। বাঁশখালী উপজেলার চনুয়া ইউনিয়নে তাদের বাড়ি।

প্রথম কন্যা সন্তানের মুখ না দেখেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফায়ার সার্ভিসে ফায়ার ম্যান মনিরুজ্জামান মনিরের। সপ্তাহখানেক আগে জন্মগ্রহণ করেছে তার কন্যা সন্তান। কয়েকদিনের মধ্যে ছুটি নিয়ে কন্যা সন্তানকে দেখতে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সে আশা অপূর্ণ হয়ে রইলো। মনিরের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের নাইয়ারা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের ছেলে। তারা পাঁচ ভাই, এক বোন। তিনি বরিশাল বিয়ে করেছেন। এক সপ্তাহে আগে তার স্ত্রী বরিশালে বাবার বাড়িতে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। এটিই এ দম্পতির প্রথম সন্তান। বিস্ফোরণে কারো হাত কারো পা উড়ে গেছে। আবার অনেকেই পুড়ে হয়েছে দগ্ধ কয়লা। চেনার কোন উপায় নেই।

এত হতাহতের ঘটনায়, নববধূ অপেক্ষা করছে তার স্বামীর জন্য। শিশু সন্তান অপেক্ষা করছে তার বাবার জন্য। অপরদিকে ঘরের একমাত্র অভিভাবক যখন বড় ভাই। ফোন করে বলে সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ভয়াবহ। আমি নিরাপদে আছি বাড়িতে ফিরে আসছি। তবে বাড়িতে ফিরে আসা হলো না সুমনের। আগুনের ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করছিলেন ওয়ালিউর রহমান নামে এক তরুণ মোবাইলে ফেসবুক লাইভ করছিলেন।

লাইভে দেখা যায়, কনটেইনারে আগুন জ্বলছে এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন। লাইভে থাকা অবস্থায় দেখা যায় হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই স্ক্রিন অন্ধকার হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় তার সন্ধান মেলেনি। রাত ২টার দিকে ফেসবুক লাইভকারী তরুণ ওয়ালিউর রহমানের লাশ আসে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে। এইভাবে প্রত্যেকটা মৃত্যুর এবং প্রত্যেক আহত হওয়াদের একেকটা হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রাসায়নিক ডিপো হাওয়াই লাশের দীর্ঘ সারি হয়েছে। এমনটি বলেছেন এবং তদন্তের দাবি করেছেন স্থানীয় সাংসদ।

আর্তনাদের মাঝে স্বস্তির খবর চট্টগ্রামবাসীর কত বড় কলিজা তাও দেখল বিশ্ববাসী। বিশ্বের গণমাধ্যম ফলাও করে প্রকাশ না করলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুসারে সহযোগিতার হাত বাড়ানো।

ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে কাজ করা  ফায়ার সার্ভিসের অন্তত ২৫টি ইউনিটকে সহযোগিতা করতে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২০ জনের বিশেষ হ্যাজম্যাট টিম আসেন। এই টিমটি কেমিক্যালের আগুন নেভাতে পারদর্শী এবং তারা বিদেশ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকসহ (ডিজি) ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান সরেজমিন পরিদর্শনে ডিপোর লোকজনকে না পেয়ে রেগে গেলেন। বন্দরের পক্ষ থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন  এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ৯ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যা ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ডিপো পরিচালকদের বিরাট অবহেলা ছিল। এনবিআর ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা আশ্বাস দেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রয়ে গেছে দাহ্য পদার্থ, যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভয়াবহ  বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত কোনো দেশ। কেঁপে উঠেছে আশপাশের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা। ভেঙে গিয়েছে বাড়ি-ঘরের জানালার কাচ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর