1. admin@dailydigantor.com : admin :
ষাটোর্ধ্বরা পাবেন পেনশন সুবিধা - দৈনিক দিগন্তর
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন
রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

ষাটোর্ধ্বরা পাবেন পেনশন সুবিধা

দৈনিক দিগন্তর ডেস্ক
  • আপডেট সময় : রবিবার, ২৯ মে, ২০২২

দিগন্তর ডেস্ক রিপোর্ট : বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। আনুমানিক হারে পেনশন পদ্ধতির মাধ্যমে একজন ষাটোর্ধ্ব নাগরিক ৮০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ২০ বছর ১৮ হাজার থেকে ৬৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাতা পেতে পারেন।

তবে এটি নির্ভর করবে জমাকৃত অর্থের ওপর। বিষয়টি চূড়ান্ত করবে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ। পেনশন পদ্ধতিকে স্থায়ী কাঠামোয় আনতে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন- ২০২২-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। খুব শিগগিরই আইনটির খসড়া অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উঠবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত্র একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে অর্থবিভাগ।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র মতে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থাৎ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পেনশন পদ্ধতি চালু হবে। সে অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় উঠতে পারে এবং অনুমোদন পেলে দ্রুত সময়ের বাকি কার্যক্রম শেষ করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের অঙ্গীকার করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার অনুযায়ী সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালুর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।  বর্তমান গড় আয়ুষ্কাল ৭৩ বছর যা ২০৫০ সালে ৮০ বছর এবং ২০৭৫ সালে ৮৫ বছর হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় আগামী তিন দশকে একজন কর্মজীবী ব্যক্তি অবসর গ্রহণের পরও গড়ে ২০ বছর আয়ু থাকবে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, ১৮-৫০ বছর বয়সি সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন; বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন, জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভিত্তি ধরে দেশের ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি সব নাগরিক পেনশন হিসাব খুলতে পারবেন। আপাতত স্বেচ্ছাধীন থাকলেও পরবর্তীতে বাধ্যতামূলক করা হবে; কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা প্রদান সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে; প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি পৃথক পেনশন হিসাব থাকবে ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে; এ পেনশন পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে।

তবে এ ক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হবে; মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে; তবে প্রবাসী কর্মীদের সুবিধার্থে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দিতে পারবে; সুবিধাভোগী বছরে ন্যূনতম বাৎসরিক জমা নিশ্চিত করবে।

অন্যথায় তার হিসাব সাময়িকভাবে স্থগিত হবে এবং পরবর্তীতে বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে হিসাব সচল করা হবে; সুবিধাভোগী আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে চাঁদা হিসেবে বর্ধিত অর্থ (সর্বনিম্ন ধাপের অতিরিক্ত যেকোনো অংক) জমা করতে পারবে; পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা (৬০ বছর) পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন প্রদেয় হবে; পেনশনাররা আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন; নিবন্ধিত চাঁদা জমাকারী পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে জমাকারীর নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের (মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন।

পেনশন স্কিমে জমাকৃত অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে যা সুদসহ পরিশোধ করতে হবে; কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেয়ার আগে নিবন্ধিত চাঁদা প্রদানকারী  মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেয়া হবে; পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে; এ ব্যবস্থা স্থানান্তরযোগ্য ও সহজগম্য; অর্থাৎ কর্মী চাকরি পরিবর্তন বা স্থান পরিবর্তন করলেও তার অবসর হিসাবের স্থিতি, চাঁদা প্রদান ও অবসর সুবিধা অব্যাহত থাকবে; নিম্ন আয়সীমা নিচের নাগরিকদের ক্ষেত্রে পেনশন স্কিমে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে প্রদান করতে পারে।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যদি মাসিক চাঁদা এক হাজার টাকা, মুনাফা ১০ শতাংশ ও আনুতোষিক ৮ শতাংশ ধরা হয় তাহলে ১৮ বছর বয়সে যদি কেউ চাঁদা দেয়া শুরু করে এবং ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তা চালু থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি অবসরের পর ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা পেনশন পাবেন। যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেয়া শুরু করেন এবং ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে তাহলে অবসরের পর প্রতি মাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা পেনশন পাবেন।

তবে চাঁদার পরিমাণ এক হাজার টাকার বেশি হলে আনুপাতিক হারে পেনশনের পরিমাণও বেশি হবে। আইনের আওতায় একটি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নামে একটি পরিচালনা প্রতিষ্ঠান গঠিত হবে। এটি পরিচালনার জন্য একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবেন। কর্তৃপক্ষ আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বিধান অনুযায়ী সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদন করবে।

এছাড়া অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পেনশন গভর্নিং বোর্ড গঠন করা হবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগের সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সদস্য হবেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ তহবিল নামে একটি তহবিল গঠন করা হবে।

সম্প্রতি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে র্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। বিদেশ থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও একই সুযোগ রাখা হচ্ছে। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এ ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে। শুরুর দিকে এ ব্যবস্থা ঐচ্ছিক রাখা হলেও পরবর্তী সময়ে এটাকে বাধ্যতামূলক করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর