স্টাফ রিপোর্টার :চলতি বছরের বৃষ্টি মৌসুম শুরুর আগেই রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন।
শনিবার (২৮ মে) সারাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন। এদের মধ্যে ৪২ জনই রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩১০ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২৬৭ জন।
এ ছাড়া, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রোগী ভর্তি ছিল ১২৬ জন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ২০ জন করে, এপ্রিলে ২৩ জন এবং মে মাসের ২৮ দিনে ১২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ডেঙ্গুর মৌসুম সাধারণত জুন থেকে শুরু হয়, আর শেষ হয় অক্টোবরে। দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এখন আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। কারণ, দেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এতে বিভিন্ন স্থানে পানি জমছে। এই জমা পানিতে এডিস মশার জন্ম হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো পাত্রে বা স্থানে সাত দিনের পানি যাতে জমে না থাকে, সে বিষয়ে ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে। ফুলের টব, গাছ কিংবা যেকোনো পাত্রে যাতে পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। উন্মুক্ত স্থানে সাত দিনের বেশি পানি জমে থাকলে সেখান থেকেও এডিস মশার জন্ম হতে পারে। এ জন্য রাস্তাঘাটেও যাতে পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে ঢাকার সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
ডেঙ্গু প্রকোপের এ সময়ে বাসাবাড়িতে অব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্রে পানি জমতে না দেয়াসহ দিনে ও রাতে মশারি টানানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি নিরাপদ এবং কার্যকর ডেঙ্গু ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা এখনও চলছে। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা মেনে চলা এবং প্রতিরোধমূলক প্রোটোকল মেনে চলা সর্বোত্তম উপায়। এটি মনে রাখা উচিত যে ডেঙ্গু একটি সংক্রমণ হিসেবে রয়ে গেছে, যা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্মূল করা যায়।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৩১০ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ২৬৭ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু নেই।
এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করে। সেই বছর এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মারা যান ১৪৮ জন। করোনা মাহামারির মধ্যে ২০২০ সালে ডেঙ্গু তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। তবে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি করে ডেঙ্গু।