স্টাফ রিপোর্ট :অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষ হয়েছে আজ। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৮৮২টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রাজধানীতে ১৬৭টি। বাকিগুলো ঢাকার বাইরে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে বন্ধ করা হয়েছে।
রোববার (২৯ মে) রাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। রোববার রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দুটি মিলে মোট তিনটি টিম অভিযানে নামে। এ সময় যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ধোলাইপাড়ে মোট ৪টি হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ স্ট্যান্ডার্ড গ্লুকোজ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ইকো জেল ও রক্তের ব্যাগে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় এ্যাকটিভ ব্লাড ব্যাংক, ট্রান্সফিউশন এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিপ্যাথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ কয়েককটি প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর।
বৈধ কিংবা অবৈধ প্রতিষ্ঠানের কোনো তালিকা ছিলো না অভিযান চালানো জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে। ফলে ঢাকার বাইরে অনেকটা জোরেশোরে এই অভিযান চললেও রাজধানীতে ছিলো অনেকটা অগোছালো।
রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের কথা শুনে রোগীকে কক্ষে রেখে পালিয়ে যান এক ডাক্তার। পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা রোগীকে উদ্ধার করে সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। জানা গেছে, রোববার সকালে সারা দেশের অংশ হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালানো হয়। এ সময় নিবন্ধন না থাকায় উপজেলার পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে অভিযানে যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
খবর পেয়ে অপারেশন শেষে রোগীকে কক্ষে রেখে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছেন এক ডাক্তার। পরে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রোগীকে উদ্ধার করে মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. আহমেদুল কবির বলেন, হাসপাতালে সব রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষে হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকা বিভাগে ১৫৫টি অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ১২টি। চট্টগ্রামে ২২৯টি। রাজশাহীতে ৭৮টি। রংপুরে ১৪টি, ময়মনসিংহে ৯৬টি। বরিশালে ৫৯টি, সিলেটে ৩৫টি ও খুলনায় আরও ২০৪টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেলাল হোসেন বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা তিন দিন সময় দিয়েছিলাম। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৮৮২টি ক্লিনিক ও হাসপাতাল সিলগালা করে দিয়েছি আমরা। এখনো কয়েকটি জেলার তথ্য আসেনি, ফলে সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে অভিযান আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। যাতে করে অনিবন্ধিত ও অনিয়মের দায়ে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানগুলো আবার গড়ে না ওঠে সে জন্য অভিযান চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে কোন কথা হয়নি। তারা তাদের মত করে অভিযান চালিয়েছে। ঢাকার বাইরে সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে এবং রাজধানীতে অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে তিনটি টিম কাজ করেছে। গত ২৬ মে সারা দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি সব স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরদিন থেকে সারা দেশে চলে অভিযান।
এতে ঢাকা জেলাসহ রাজধানীতে ১৬৭টি ও ঢাকার বাইরে ৭১৫টি সহ মোট ৮৮২টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে।