মন্ত্রিসভা আগামী তিন দিনের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জের বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে একটি বিস্তৃত চিত্র দেবে।
মন্ত্রিসভা নির্দেশ দিয়েছে, প্রতিবেদনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড-১৯ মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে করণীয় ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিশেষ করে ‘কীভাবে বিষয়টি পরিচালনা করতে হবে, কোথায় বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে এবং কোথায় শিথিল করতে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিতভাবে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
মার্কিন ডলারের দামের বিষয়টিও ওই সমন্বিত প্রতিবেদনে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা হাট ও বাজার (প্রতিষ্ঠা ও ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০২২-কে নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে; যাতে এটি সময় উপযোগী করার জন্য ১৯৫৯ সালের একটি অধ্যাদেশ প্রতিস্থাপন করা হয়।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে ২৬টি ধারা রয়েছে। আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো হাট-বাজার করতে পারবে না।
তিনি বলেন, কোনো এলাকায় অননুমোদিত হাট-বাজার গড়ে উঠলে সরকার খাস জমি হিসেবে দখল করবে।
জেলা প্রশাসন ও সরকার হাট-বাজারের জমি পরিচালনা করবে এবং স্থায়ীভাবে কোনো জমি হস্তান্তর করা যাবে না।
প্রস্তাবিত আইনে কেউ বা একদল লোক অবৈধভাবে কোনো হাট-বাজারের খাস জমি দখল করে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ভূমি উন্নয়ন কর আইন, ২০২২ মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে যা ভূমি উন্নয়ন কর অধ্যাদেশ ১৯৭৬ প্রতিস্থাপন করবে।
আইন অনুযায়ী ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমি ভূমি উন্নয়ন করমুক্ত থাকবে, বঙ্গবন্ধু যা করেছিলেন। কিন্তু কেউ যদি ২৫ বিঘার বেশি জমির মালিক হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে পুরো জমির জন্য কর দিতে হবে।
কোনো জমি একাধিক ব্যক্তির মালিকানাধীন হলে সে ক্ষেত্রে ওই জমির মালিকদের নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারণের জন্য শুনানি হবে এবং এরপর ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণ করা হবে।
পরপর তিন বছরের বেশি ভূমি উন্নয়ন কর না দিলে বার্ষিক ছয় দশমিক ২৫ শতাংশ জরিমানা হবে।
ব্যক্তিগত বা পারিবারিক মালিকানাধীন কবরস্থান এই করের আওতাভুক্ত ছিল।
অনুমোদিত ভূমি উন্নয়ন আইন, ২০২২-১৯৮৪ সালের একটি অধ্যাদেশকে প্রতিস্থাপন করবে।
বিদ্যমান আইনে কোনো ব্যক্তি ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হতে পারবেন না। কারও দখলে এর বেশি জমি পাওয়া গেলে অতিরিক্ত জমি সরকার দখলে নেবে।
এই আইন লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য হবে এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা এক মাসের কারাদণ্ড হবে।
সভায় শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যকেও আরও বেশি গুরুত্ব দিতে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতি বাংলাদেশ-২০২২ এর খসড়া অনুমোদন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিষয়েও আলোচনা হয়েছে এবং পরবর্তী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ঋণ বরাদ্দ করেছে বলে অবহিত করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটি অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে।
পদ্মা সেতু চালুর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করছি জুনের শেষ সপ্তাহে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
‘আমরা প্রস্তুত। আমরা আশা করি যে আমরা আগামী মাসের শেষ সপ্তাহের আগে সেতুটি উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করতে সক্ষম হব।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অতীতে একাধিকবার বলেছেন সেতুর নাম হবে পদ্মা সেতু। ‘তিনি যে কোনও দিন বিষয়টি পরিষ্কার করবেন।’
সেতু পারাপারের জন্য যানবাহনের টোল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত ফেরি ফি থেকে দেড় গুণ বেশি টোল নির্ধারণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সেতু কর্তৃপক্ষকে এক শতাংশ সুদে টাকা সরকারকে ফেরত দিতে হবে।