পর্যটননগরী কক্সবাজার শহরে ঢুকতেই বাস টার্মিনাল থেকে দুটি আলাদা রাস্তা। একটি প্রধান সড়ক, অপরটি বাইপাস সড়ক। চার লেনের বাইপাস সড়কটি পাহাড় ভাগ করে কলাতলী পর্যটন জোন হয়ে আবারও শহরের প্রধান সড়কে মিশেছে। এ সড়ক ধরে যেতে যেতে পাখপাখালির কলতান, সাগরতীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ে যে কেউ মুগ্ধ হন। একসময়ের জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ পাহাড়গুলো পর্যটকদের আলাদা নজর কাড়ত। এখন এসব পাহাড়ের গায়ে গাছগাছালি নয়, আছে কোথাও উঁচু দালান, আবার কোথাও ঝুপড়ি ঘর।
শহরের কলাতলী মোড়ের হোটেল-মোটেল জোনে নামতে হাতের ডান দিকে চোখে পড়বে ৫১ একর আবাসন প্রকল্প। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নামেই এই প্রকল্পটি বানানো হয়েছিল। তবে বন বিভাগ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) মামলার কারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ প্রকল্প বাতিল করা হয়।
কিন্তু এই প্লট ও আশপাশে আরও ৫ একর পাহাড় গত এক মাসে সাবাড় করার অভিযোগ উঠেছে। এসব পাহাড় দখল করে গাছ কেটে প্লট বানিয়ে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
এ নিয়ে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজ। গত রোববার কলাতলীর জয়নাল সওদাগরের ঘোনা এলাকায় পাহাড় কাটা ও দখলের সত্যতা পান তিনি। এ সময় তিনি সেখানে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে ‘সরকারি জমি’ লেখা সাইনবোর্ড স্থাপন, বাঁধ অপসারণ ও বন সৃজন এবং পাহাড় দখলে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ বাবুল, জয়নাল সওদাগর, সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারী মোহাম্মদ ইয়াছিন, জুলফিকার আলি ভুট্টো, মাছন ফকির, ইয়াকুব মাঝিসহ কয়েকজন প্রভাবশালী প্রায় এক মাস ধরে ওই এলাকায় শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করছেন। তাঁরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চড়া দামে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্লট বিক্রিও করেছেন।
এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে সেখানে দুই দফা অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে কয়েকটি ঘর ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু অভিযান শেষে আবারও দখল নেমে পড়ে দখলদারেরা।
তবে পাহাড় দখল করে প্লট তৈরি ও স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা প্রশাসনের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ বাবুল। তাঁর দাবি, এ ঘটনায় তিনি কোনোভাবে জড়িত নন।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন গত ২৫ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সাত কর্মকর্তার কাছে পাহাড় ও গাছ কেটে স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, আদালত জেলা প্রশাসনের আবাসন প্রকল্পটি বাতিল, পাহাড় না কাটা ও বন এলাকা থেকে সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়ন তো হয়ইনি, উল্টো পাহাড় দখল ও কাটা অব্যাহত রয়েছে।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সহকারী কমিশনার (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘পাহাড় কাটা ও দখলের খবর পেলেই অভিযান চালানো হচ্ছে। অনেক সময় অভিযানের খবর ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পেয়ে যাচ্ছে। এতে তারা পালিয়ে যায়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পাহাড় কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, ‘সরেজমিনে পরিদর্শনে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।