বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আগামী জুন মাসের প্রথম থেকেই আমরা এক কোটি মানুষকে টিসিবির পণ্য দেয়া শুরু করতে পারব। তিনি বলেন, টিসিবির পণ্য ৮৫ লাখ মানুষকে বাদ দিয়ে ১৫-১৬ লাখ মানুষকে দেয়ার চেয়ে, একটুখানি চাপ দিয়ে এই ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকা এবং বরিশালে লিস্টটা আমরা করিয়ে নেব, একসঙ্গে এক কোটি লোককে আমরা দেব। ১৫ দিন আমরা পিছিয়ে গেছি, আসলে আরও বেশি অ্যাডভ্যান্স হওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।
সোমবার (১৬ মে) সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’-এ সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের উপস্থাপনায় সংলাপ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাস।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এক কোটি মানুষকে টিসিবির পণ্য দিয়েছি দুইবার। আমাদের মাথায় আছে এক কোটি মানুষকে দেয়া রেগুলার করব। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন শহরের মানুষগুলোকে দেয়া হচ্ছে, গ্রামের মানুষকে তো দেয়া হচ্ছে না।’ একটু সময় নিয়ে ঢাকাসহ একযোগে সারা দেশে দেয়ার কথা জানান টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, ‘এর আগে ঢাকাতে আমরা কোনো লিস্ট পাইনি, যে নেটওয়ার্কে গ্রামে দেয়া হয়েছিল। সেভাবে ঢাকাতেও ট্রাকে করে দেয়া হয়। এক কোটির মধ্যে ১৫ লাখ মানুষকে আমরা ট্রাকে করে দেই। বাকি ৮৫ লাখ দরিদ্র সীমার নিচে যে কার্ড থাকে তাদের দেয়া হয়। ইনস্ট্রাকশনটা এসেছে এবং আমরাও রি-অ্যারেঞ্জ করেছি।
এর আগে টিসিবি থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ১৬ মে থেকে খোলাবাজারে ১১০ টাকা লিটার সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি শুরু করা হবে। তবে গত রোববার রাতে হুট করেই সেই কার্যক্রম স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি দেয় সংস্থাটি। সংস্থাটি বলছে, রাজধানীতেও এখন শুধু ফ্যামিলি কার্ডে পণ্য দেয়া হবে। খোলাবাজারে ট্রাকে করে আর পণ্য বিক্রি হবে না। ফ্যামিলি কার্ড কার্যক্রম বাস্তবায়নে গতকাল থেকে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি স্থগিত করা হয়েছে।
টিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিক্রয় কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীর কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার নীতিগতভাবে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য (ভোজ্যতেল, মশুর ডাল, চিনি) বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে ফ্যামিলি কার্ড প্রণয়ন ও বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ নয় স্থিতিশীল রাখতে চান উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘অনেক ব্যবসায়ীকে আমরা ধরেছি। সেটি ধরে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করছে ভোক্তা অধিকার। সেখানে অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে এবং জেলেও পাঠানো হয়েছে। তবে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাই না যাতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রমজান মাসটা সংযমের মাস। ব্যবসায়ীরা জানে ঈদের পর দাম বাড়বে তারা সেই সুযোগ নিয়েছে। তবে আমাদের ভুল হয়েছে টানা দুই মাস তেলের দামটা নির্ধারণ করিনি, যদি করতাম তাহলে তারা সুযোগটা নিতে পারত না। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা বেড়েছিল, তাই সেটি আগে ফিক্সড করলে সমস্যাটা হতো না।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এখন গমের দামও বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি জিনিসপত্রের দামের ওপর পড়েছে। গমের চাহিদা মেটাতে ব্রাজিলসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকেও গম আনা হবে।’ সরকার বিরোধীদের কথায় মানুষকে অতঙ্কিত না হওয়ার আহŸান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো কখনোই হবে না। কারণ সরকার যথেষ্ট সচেতন আছে সব ব্যাপারে। তাই বিরোধীরা যতই বলুক, সেসব কথার ভিত্তি নেই।’
ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। আমরা ব্যবসায়ী-বান্ধব। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুযায়ী দাম ফিক্সডআপ করে দেই। সে অনুযায়ী বাজারে দামটা থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাই।’ পেঁয়াজের বিষয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের আইপি বন্ধ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষকরা যাতে দাম পায় সেটি দেখতে হবে। আমরা দেখছি কৃষকরা যাতে অন্তত ২৫ টাকা পায়। বাকি ট্রান্সপোর্টসহ অন্য খরচ মিলে ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকায় যাতে খেতে পারে। কৃষকরা যাতে দাম পায় এবং ভোক্তারাও যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে সেটি আমরা দেখছি।
২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারব বলে আশা করছি। ১৫০টির ওপর দেশে ফার্মাসিটিক্যাল পণ্য পাঠাতে পারছি। অন্যদিকে ইথিওপিয়া ৯০ শতাংশ এসব পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করে। গার্মেন্ট সেক্টরে আরও ১০ লাখ কর্মী যুক্ত হবে বলে আশা করছি।
বিএইচ/ইএফ