নিজস্ব প্রতিবেদক।। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ১৯টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে স্থায়ী হাট হিসেবে রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার গাবতলী পশুর হাট ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সারুলিয়া পশুর হাট। প্রতি বছরের মতো এবারও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১৭টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে হাটের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে বিগত বছরগুলোর মতো এবারো কোরবানির পশু বেচাকেনা করতে অস্থায়ী হাটের পাশাপাশি ডিজিটাল হাট চালু করে ডিএনসিসি। এ বছর তাদের স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটের পাশাপাশি অনলাইন হাটও চালু থাকবে।
ডিএনসিসি জানিয়েছে, ডিজিটাল হাটে পশু ক্রয়-বিক্রয়ের নিয়ম ঠিক করে দেয়া হবে। এতে পশু বিক্রির কী কী নিয়ম মানতে হবে, কী কী তথ্য থাকবে তা উল্লেখ করে দেয়া হবে। তবে এই প্ল্যাটফরমে ই-ক্যাব এবং বিডিএফএ’র অনুমোদিত সদস্যের প্রতিষ্ঠান কেবল অংশ নিতে পারবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকদের অনুমোদিত বিক্রেতারা তাদের পশু বিক্রি করতে পারবেন
ক্রেতার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ ধরনের রক্ষণশীল কৌশল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গাবতলী (স্থায়ী), বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই, এফ, জি, এইচ পর্যন্ত এলাকার খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৩০০ ফিট সড়ক সংলগ্ন উত্তর পাশের সালাম স্টিল ও যমুনা হাউজিং কোম্পানির এবং ব্যক্তিগত মালিকানাধীন খালি জায়গা ও মোহাম্মদপুরের বছিলায় ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গায় বসবে কোরবানি পশুর হাট।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সারুলিয়া (স্থায়ী), মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠ সংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের এলাকা ও পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গায় বসবে হাট।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন গণমাধ্যমকে বলেন, কোরবানির পশুর হাট বসানোর জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে আমাদের কিছু নির্দেশনা রয়েছে। এর বাইরে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন কোনো নির্দেশনা এলে সেটাও বাস্তবায়ন করা হবে। এর আগে গত বছর করোনা মহামারিতে দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে ২৩টি (ডিএনসিসি ১০, ডিএসসিসি ১৩টি) পশুর হাট বসানো হয়েছিল।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ঢাকা উত্তরে ৭টি এবং দক্ষিণে ১০টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে অস্থায়ী হাটগুলোর জায়গা নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করেছে সংস্থা দুটি। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব হাটের সংখ্যা কম- বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এদিকে ১ম পর্যায়ের দরপত্র জমাদানের শেষদিন ছিল ৯ই মে। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সিডিউল জমা নেয়ার কথা ঢাকা বিভাগের কমিশনারের কার্যালয়, করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকতার কার্যালয়ে। তবে শেষ দিনে কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে দরপত্র জমা না নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর অঞ্চল-১ থেকে দরপত্র ক্রয় ও জমা দিতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। অভিযোগকারীরা বলছেন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে আঞ্চলিক অফিসে জমা নেয়ার কথা থাকলেও প্রভাবশালীদের চাপের মুখে অনেকের দরপত্র জমা নেয়নি। ওই দিন দুপুরে আঞ্চলিক অফিস থেকে জানানো হয়েছে যে, করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। তবে দুপুর ১টায় শেষ সময় হওয়ায় অনেকেই যানজটে আটকা পড়ে শিডিউল জমা দিতে পারেন নি। তারা রি-সিডিউল চেয়ে মেয়রের সহযোগিতা চেয়েছেন।
দরপত্র জমা দিতে না পেরে নাজমুল হাসান ও ইসমাইল হোসেন বলেন, তারা শিডিউল কিনেও জমা দিতে পারেননি। আমাদেরকে না জানিয়ে যে সকল জায়গায় শিডিউল জমা নেয়ার কথা ছিল সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমাদের দাবি পরবর্তী তারিখে আবারো রি-শিডিউল দেয়া হোক। ভুক্তভোগী সাঈদ সরকার বলেন, আঞ্চলিক অফিস-১ এ শিডিউল জমা দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখান থেকে বলা হয়েছে এখানে শিডিউল জমা নেয়া হবে না। গুলশান নগর ভবনে জমা নেয়া হবে। তখন দ্রুত নগর ভবনে রওনা হই কিন্তু যেতে যেতে সময় শেষ হয়ে যায়। তাই শিডিউল জমা দিতে পারি নাই। মেয়র মহোদয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি রি-শিডিউল দেয়ার জন্য। ডিএনসিসির আঞ্চলিক অফিস-১ এর নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নাইন বলেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে জমা দেয়ার বক্স থাকার কথা। জমা দেয়ার সময় কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানালে একটা ব্যবস্থা করে দিতাম।
তিনি আরও বলেন, পশুর হাটের আবারো রি-টেন্ডার হবে। যারা জমা দিতে পারেননি তারা পরবর্তীতে আবারো টেন্ডারে অংশ নিতে পারবেন।