1. admin@dailydigantor.com : admin :
ঘুষকে ‘সম্মানী ও পারিশ্রমিক’ বলে বদলি হলেন শিক্ষা কর্মকর্তা – দৈনিক দিগন্তর
শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন
শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

ঘুষকে ‘সম্মানী ও পারিশ্রমিক’ বলে বদলি হলেন শিক্ষা কর্মকর্তা

দৈনিক দিগন্তর ডেস্ক :
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

 

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:
ঘুষের টাকাকে ‘সম্মানী ও পারিশ্রমিক’ দাবি করা জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার সেই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বদলি করা হয়েছে। তাঁকে নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা পদে বদলি করা হয়।
গত রবিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ( সাঃ প্রশাঃ) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাসের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানা গেছে। ওই প্রজ্ঞাপনে সারা দেশের ১৮ জনকে বদলি করা হয়েছে। আগামী ৭ নভেম্বরের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় একই তারিখে অপরাহ্নে তাৎক্ষনিকভাবে অবমুক্ত হবেন প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিও ভূক্তির ফাইল অনলাইনে পাঠাতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তোলেন শিক্ষকেরা। স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে তাঁকে সরাসরি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। এ টাকা কম হলে তিনি স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্টদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে এমপিও ভূক্তির ফাইল পাঠাতে তিনি নিজের বিকাশ নম্বরে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়ে নেন। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও অনলাইনে এমপিওভূক্তির ফাইল পাঠাতে টাকা নেওয়ার কথা অকপটে সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এই টাকা ঘুষ নয় সম্মানী ও পারিশ্রমিক’। কর্মচারী নিয়োগে সম্মানী ও অনলাইনে এমপিওভূক্তির ফাইল পাঠাতে পারিশ্রমিক নেই। এনিয়ে গত ১৮ অক্টোবর বেশ কিছু জাতীয় অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় আক্কেলপুরের শিক্ষা কর্মকর্তার, ‘এই টাকা ঘুষ নয়, সম্মানী ও পারিশ্রমিক’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
৫-৬-টি স্কুল-মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষক ও সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম গত ৫ মে আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এ পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রাসা মিলে ৮-১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া নিয়োগ হয়েছে। এসব নিয়োগে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতে জন প্রতি ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন। এই টাকা কেউ বিকাশে কেউবা প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে তাঁকে দিয়েছেন। তিনি নিয়োগের ও এমপিও ফাইল অগ্রগ্রামীর টাকার রশিদও দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে তিনি কাউকে এ টাকার রশিদ দেননি।
উপজেলার আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম বলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে মারুফ হোসেন নামে একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এতে তিনি খুশি হননি। আরও টাকা দাবি করেছেন। এই টাকা বৈধতা রয়েছে বলে তিনি আমাকে এ টাকার রশিদ দিতে চেয়েছেন। তবে রশিদ দেননি। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ফোনে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সঙ্গে কথা বলে বিকাশে টাকা নিয়েছেন ।’
সোনামুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিয়েছি। কত টাকা সম্মানী দিয়েছেন তা জানাতে অপারগতা জানান ।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিজ উপজেলার স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। এখানে ডিজির প্রতিনিধিও থাকেন। বেশিভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সাজানো প্রশ্ন করতে বলা হয়। আমরা নিজেদের মতো করে প্রশ্ন করতে পারি না। আগেই প্রার্থী ঠিকঠাক থাকে। পরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠান প্রধান একটি খাম ধরিয়ে দেন। খাম খুলে দেখা যায়, ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা। এটা ঘুষ নয়, সম্মানী। ডিজির প্রতিনিধিকে আমার চেয়ে আরও বেশি টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। এনটিআরসি কর্তৃক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিওভূক্তির জন্য ফাইল পাঠাতে হয়। একজনের ফাইল পাঠাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এ বাবদ শিক্ষকদের কাছে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা নেই। এটা দোষের কিছু দেখি না ।’
সম্মানীর টাকা কোথায় থেকে আপনাদের দেওয়া হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও সত্য যে টাকা ছাড়া কোন নিয়োগ হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন। সেখান থেকে তাঁরা খরচা করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডোনেশন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই টাকা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসেবে রাখতে হয়। ডোনেশনের টাকা প্রতিষ্ঠানের হিসেবে জমা করা হয় না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আরও বলেছিলেন, দেওড়া উচ্চবিদ্যালয়ে তিন জন কর্মচারী নিয়োগ হবে। কয়েক দিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসে আমাকে বললেন, আমরা আপনাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে দশ হাজার টাকা দিব। আমি বললাম আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিবেন কোনো সম্মানী দিতে হবে না। পরে বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির একজন সদস্য এসে বললেন, স্যার তিন নিয়োগে ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে বোঝেন। আমি নিয়োগের সম্মানী টাকার রশিদ দেওয়ার কথা নয় মাস্টার রোলে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেছি। এটা আমার প্রাপ্ত। সরকার থেকে আমাকে এ ব্যাপারে টিএডিএ দেওয়া হয় না। আমি সম্মানীর টাকা আমার আয়কর রির্টানে দেখাব ।

Facebook Comments Box
সংবাদটি শেয়ার করুন :
এ জাতীয় আরও সংবাদ

ফেসবুকে আমরা