স্টাফ রিপোর্টার।।আজ মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা সভাপতিত্বে বয়রা পুলিশ লাইনস্থ মাল্টিপারপাস হলে স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর ৪৮ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত ও ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এ সময় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক এবং মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি বিএল কলেজ, খুলনার অধ্যক্ষ প্রফেসর শরীফ আতিকুজ্জামান। বিশেষ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির এবং খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান।
সিটির মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক তিনি বক্তব্য বলেন ‘‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পুলিশ বাহিনী তৈরি করতে চেয়েছিল তাঁর আশা আজ পূর্ণ হয়েছে। এজন্য আপনারা কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবেন না। দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজাকার আলবদরদের দোসর স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের নির্মম বুলেটের আঘাতে বাঙালির আশার বাতিঘর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল সদস্য শাহাদত বরণ করেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সাথে খুলনার সন্তান বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ ভ্রাতা শহীদ শেখ আবু নাসেরকে ও হত্যা করা হয়। দেশি বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু’র পরিবারের হত্যা করে ঘাতকরা বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর বাকি খুনিদের শাস্তি নিশ্চিতকল্পে নিরলসভাবে চেষ্টা করার পাশাপাশি আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাস, ইভটিজিং মুক্ত এবংশিক্ষা কৃষি, শিল্পে সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে তিনি বলেছিলেন “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম”। তিনি বলেছিলেন-আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ যদি কেউ শোনে তাহলে দেখবেন একটা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার আমাদের কি করণীয় আছে সে সমস্ত নির্দেশনা দেওয়া আছে। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের ১৮ হাজার সৈন্য প্রত্যক্ষ ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁর নয় মাস জেলে থাকাকালীন মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর ভাষণকে ধারণ করে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে ছিলেন না।”বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মানে জাতির পিতা তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সকলকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হাজার বছরের ইতিহাসের মহানায়ক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান স্থপতি, বাঙালির আশার বাতিঘর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে শহিদ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সকল শহিদের আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
কেএমপি’র মান্যবর পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা বঙ্গবন্ধু’র জীবনী স্মৃতিস্মরণ করে আলোচনা সভায় বলেন, ‘‘আমরা অনন্ত শ্রদ্ধার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে চাই। বাঙালির হাজার হাজার মাতা আমাদের মুক্তির জন্য একজন মহানায়ক চেয়েছে। বঙ্গবন্ধু সে স্বপ্ন পূরণ করেছিল। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে ভাষণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তির সকল বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন করেছিলেন। বাঙালি জাতি ও বাংলাকে অনন্য নেতৃত্বে নিয়ে গেছেন ঠিক তখনই ঘাতকেরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা ব্যতীত সকলকে সপরিবারে হত্যা করেছিলো। সে দিন বাংলাদেশ বেতারে ঘাতক মেজর ডালিম বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘোষণা দিয়ে স্বাধিনতার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছিল। আমরা ছাত্র জীবনে জাতীয় দিবসে কখনই বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব পাইনি তাকে পরিকল্পিতভাবে ঘাতকেরা স্বাধীনতার অপশক্তি দূরে সরিয়ে রেখেছিলো। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলে তিনি বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই উন্নয়নকেই দমিয়ে দিতে ঘাতকের বুলেট কেড়ে নিয়েছিলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন। আমরাই সেই দুর্ভাগা জাতি যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছি। এখন যে সকল ঘাতকেরা বিদেশের মাটিতে লুকিয়ে রয়েছে সেই সকল ঘাতকদের দেশে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে বঙ্গবন্ধুর সু-বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সম্মুখে এদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ খাতের অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।
১৯৭১ সালে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতিহত করতে কেএমপিসহ বাংলাদেশ পুলিশ সদা প্রস্তুত। আমরা মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, যানজট মুক্ত, নাশকতা, এবং পেট্রোল বোমা ও আগুন সন্ত্রাস মুক্ত একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ মহানগরী গঠন করতে বদ্ধপরিকর। আমি দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই খুলনার জনগণের জানমালের হেফাজত করা আমার প্রধান কর্তব্য হবে। পুলিশ কমিশনার উপস্থিত সকলকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।”
খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির আলোচনা সভায় বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আপনারা যেভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করেছেন তা আজ দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশ পুলিশের ছিল হৃদয়ের সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু কোন ব্যক্তির নয়, বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাংলার মানুষের নয়নের মনি। আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করতে পেরেছি।”
খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান আলোচনা সভায় বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিভিন্ন দূতাবাসে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে এবং বিচার স্থগিত করে বাংলাদেশের ইতিহাসকে আরেকবার কলঙ্কিত করা হয়েছিল।”
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনার অধ্যক্ষ প্রফেসর শরীফ আতিকুজ্জামান আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু’র স্মৃতিস্মরণ করে বলেন, ‘‘আগামীর প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য স্বপ্নের সোনার বাংলা উপহার দিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নীতি, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমের শিক্ষা নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। ফিদেল কাস্ত্রো’র ভাষায় বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। কবি অন্নদাশঙ্কর রায়’র ভাষায় বলেন, যতোকাল রবে পদ্মা-মেঘনা- গৌরী-যমুনা-বহমান, ততোকাল র’বে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান, চারিদিকে আজ রক্তগঙ্গা অশ্রু গঙ্গা বহমান, নেই-নেই ভয়, হবে-হবে জয় জয়, শেখ মুজিবুর রহমান।”
এ সময় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারি বিএল কলেজ, খুলনার অধ্যক্ষ প্রফেসর শরীফ আতিকুজ্জামান; কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত ডিআইজি (ডেপুটি কমান্ড্যান্ট), পিটিসি, খুলনা হাবিবুর রহমান খাঁন; খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ফিন্যান্স) মোঃ নিজামুল হক মোল্যা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) মোছাঃ তাসলিমা খাতুন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন; বিশেষ পুলিশ সুপার (সিটিএসবি) রাশিদা বেগম, পিপিএম-সেবা; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (প্রসিকিউশন) রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ, পিপিএম; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিবি) বি.এম নুরুজ্জামান, বিপিএম; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই) এম.এম শাকিলুজ্জামান; খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান পিপিএম-সেবা; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (এফএন্ডবি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ইএন্ডডি) মোঃ কামরুল ইসলাম; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (আরসিডি) শাহরিয়ার মোহাম্মদ মিয়াজী; ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৬ পুলিশ সুপার কানাই লাল সরকার; খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলমগীর কবির এবং খুলনা জেলা মুক্তিযোদ্ধ সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান-সহ কেএমপি ও খুলনাস্থ সকল ইউনিটের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ, ইলেকট্রোনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দ।